১০ কোটি মাকড়সার দখলে পুরোনো পরিত্যক্ত স্থাপনা
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড
রাজ্যের বাল্টিমোর শহরে অবস্থিত একটি পানি শোধনাগার বহুদিন ধরেই পরিত্যক্ত
অবস্থায় ছিল। দীর্ঘদিন সেখানে কারও পা পড়েনি। সেখানে যাওয়ার প্রয়োজনও
পড়েনি। কিন্তু মানুষের পা না পড়ায় কারখানাটিতে কি ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি
হয়েছে একসময় তা জেনে চমকে ওঠে কর্তৃপক্ষ। বেশ ক’বছর আগে বাল্টিমোরের
ওয়েস্টওয়াটার পানি শোধনাগার (Wastewater Treatment Plant)’এ গিয়ে বিপদেই
পড়ে যান একদল অনুসন্ধানী। তারা দেখেন, পুরো স্থাপনার প্রায় ৯৫ ভাগ এলাকা
দখলে নিয়েছে মাকড়সা। সেখানেই তারা বাসা বেধেছে। সংখ্যাটা শুনলে ভয় পাওয়া
অস্বাভাবিক নয়.. ১০ কোটি ৭০ লাখ।
কোটি কোটি মাকড়সা ঘুরে বেড়ানোর কারণে সেখানে প্রবেশ করাই একপ্রকার অসম্ভব
বলে জানিয়েছিলেন সেই পর্যবেক্ষক দল। Tetragnathidae জাতের ওই মাকড়সা পুরো
স্থাপনায় গিজগিজ করছিল। যেখানেই চোখ যায়, শুধু মাকড়সা আর মাকড়সা। আধা ইঞ্চির মাকড়সাগুলো সাধারণত
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকে এবং বেড়ে ওঠে। অনুসন্ধানকারীরাও বুঝলেন আসলে
পানি শোধনাগার স্থাপনাটি তেমনই হওয়ায় মাকড়সাগুলো এটাকেই বাসস্থান হিসেবে
বেঁছে নিয়েছে। অন্ধকার ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ হওয়ায় পানি শোধনাগার
কারখানাটি মাকড়সাদের বসবাসের জন্য হয়ে উঠেছে সেরা স্থান।
কিন্তু একসঙ্গে এত মাকড়সা বেঁচে আছে কি
করে? তারও সমাধান মিলল! কারখানাটির ভেতরে থাকা কীট পতঙ্গ সংহার করে আর
পরিত্যক্ত রাসায়নিক পদার্থযুক্ত পুষ্টিকর পানি পান করেই তারা বেঁচে থাকে।
বেঁচে থাকার তাগিদে কখনও কখনও নিজেরাও খাদ্যে পরিণত হয়।পুরো কারখানাটিতে মাকড়সার জাল এমনভাবে ছিল
যে ভেতরে প্রবেশ করাই অনুসন্ধানকারীদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের
মতে, কিছু মাকড়সার জাল এত শক্ত ছিল যে মানুষ আকৃতির পশুও আটকে যেতে পারে।
পরিত্যক্ত কারখানাটিতে ২০০৯ সালে প্রথম
মাকড়সার বাসা বাঁধার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেসময় অনেকেই দাবি করেছিল,
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্থানে মানুষের তৈরি স্থাপনায় এত ভয়াবহভাবে কিট বাসা
বাঁধতে পারেনি। বাল্টিমোরের পরিত্যক্ত কারখানাটিই শুধু ব্যক্তিক্রম।
এরপর থেকে কারখানাটিকে মাকড়সামুক্ত করতে
নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়। কোনোটাই কাজে আসেনি। সম্প্রতি বাল্টিমোর নগর
কর্তৃপক্ষ ৪৩ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি সংস্কার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শহরে
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পরিত্যক্ত শোধনাগারও কাজে লাগানোর
পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে কাজ শুরু হলেও এটি শেষ হতে ২০২০ সাল
পর্যন্ত সময় লাগবে। অবশ্য এর আগেও পানি শোধনের জন্য কারখানাটিকে পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছিল।
কিন্তু নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এবার সম্ভবত
কারখানাটি মাকড়সামুক্ত করে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। মেয়র ক্যাথেরিন পঘ তো
ঘোষণাই দিয়েছেন, আগামী ৩ বছরের মধ্যে শহরে পয়:নিষ্কাশন এবং বিশুদ্ধ পানি
সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
No comments