চিকুনগুনিয়া রোগ থেকে বাঁচার উপায় কী জেনে নিন
চিকুনগুনিয়া রোগ থেকে বাঁচার উপায় কী জেনে নিন
কিছুদিন আগে
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণায় বলা হয়, ১৯৫২ সালে প্রথম
তানজানিয়ায় রোগটি সনাক্ত হয়। তবে এখন বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে রোগটি
দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই রোগের কোন নির্দিষ্ট প্রতিকার
নেই। লক্ষণ দেখে চিকিৎসা ঠিক করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলছেন, সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও, এ বছর ডেঙ্গির তুলনায়
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই তারা বেশি পাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে
কয়েক হাজার এরকম রোগী কেবলমাত্র তাঁর কাছেই এসেছে বলে তিনি জানান।
ঢাকার ধানমন্ডি, কলাবাগান, গ্রীনরোড, হাতিরপুল, লালমাটিয়া, মালিবাগ
ইত্যাদি এলাকায় চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষ বেশী বলে তিনি ধারণা
করছেন। অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ আরো বলছেন, ডেঙ্গু যেমন এডিস মশা থেকে হয়, এটাও এডিস মশা থেকেই হচ্ছে। এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এসব বৃষ্টির পানি অনেকের
বাসাবাড়ির ছাদে বা বারান্দার টবে জমে থাকছে। সেখানে এসব এডিস মশা ডিম
পাড়ে। ফলে মশা বেড়েছে, আর তাই রোগটির প্রকোপও বেড়েছে।
তিনি বলছেন, চিকুনগুনিয়া রোগের প্রথমদিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি
তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, আর প্রায়ই তা একশো
চার/পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উঠে যায়। একই সাথে প্রচণ্ড মাথা
ব্যথা, শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। এজন্য
গ্রাম-গঞ্জে অনেকে একে ল্যাংড়া জ্বরও বলে। জ্বর চলে যাওয়ার পর শরীরে লাল
র্যাশ ওঠে। জ্বর ভালো হলেও রোগটি অনেকদিন ধরে রোগীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে
দাড়ায়। অন্য কোন ভাইরাসে এতটা ভোগান্তি হয়না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, এ কারণে রোগীকে দেখেই সহজেই বুঝতে পারা যায় যে তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা বলছে, নারীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচতে সতর্কতা হিসেবে করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে অধ্যাপক এ
বি এম আবদুল্লাহ বলছেন, যেহেতু মশার কারণে রোগটি ছড়িয়ে থাকে, তাই মূল
সতর্কতা হিসাবে মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন ঘরের
বারান্দা, আঙ্গিনা বা ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পানি পাঁচদিনের বেশি
জমে না থাকে। এসি বা ফ্রিজের নীচেও যেন পানি না থাকে, তাও নিশ্চিত করতে হবে
বলে তিনি জানান। যেহেতু এই মশাটি দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই দিনের বেলায়
কেউ ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা মারার জন্য স্প্রে ব্যবহার
করা যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পড়াতে হবে,
আর সবার খেয়াল রাখতে হবে যেন মশা ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়। তাহলেই এই
রোগটি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।
No comments